ই প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও আমরা

অনেকসময় ভাবতে আশ্চর্য লাগে এই একবিংশ শতকের একটি উল্লেখযোগ্য মহান প্রযুক্তি যা আজকের আধুনিক সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর বিশেষ উপযোগিতা ও যোগদান রয়েছে, এই পৃথিবীটা যেন একটি মাউস পয়েন্টের মাথায় দাঁড়িয়ে আছে । ইন্টারনেট অ্যাক্সেস হ'ল এমন একটি প্রযুক্তি যা  বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য, খেলা, বিনোদন আরও অনেক অনেক বিষয়ের উপর আমাদের ব্যবহারিক ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছে। ইন্টারনেটের "ব্রাউসার", "সার্চ-ইঞ্জিন"  আমাদের জীবনের এতো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে যে আমরা এর বিকল্প কিছুকে চিন্তা করিনা।  আমরা ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ব্যবসায়িক যোগাযোগ, আর্থিক লেনদেন, বিনোদন, ডেটিং, সংবাদ, গবেষণা এবং আরও অনেক কিছুর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করি।  

যখন আমরা এমন এক যোগান্তকারী প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি কিন্তু আমরা  কি জানি "ইন্টারনেট" প্রযুক্তির আবিষ্কর্তা কে ? স্বাভাবিক উত্তর একটাই 'আমরা জানি না' ; কারণ ইন্টারনেট সৃষ্টি করার পিছনে অনেক বড় প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এবং এটাকে সফল ভাবে ব্যবহারিক বানাতে অনেক বছর সময় লেগেছিলো এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় লেগে যাবে পরবর্তী আরেকটি অধ্যায়ে ইন্টারনেটের আবিষ্কারের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এখানে আমরা জানবো ইন্টারনেট বা ওয়েব জগতের একটি পরিষ্কার, সংক্ষপিত ও অপ্রযুক্তিগত ব্যাবহারিক দিক ।

কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এর ব্যবহার করে আসছে, ১৯৬০ দশকের শেষদিকে তারা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি নেটওয়ার্ক (এআরপিএনইটি) তৈরী করে যার মাধ্যমে তারা তাদের  সকল কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। এই নেটওয়ার্কটির নাম দেয়া হয়েছিল 'আরপানেট' এটাকে তখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের বিশেষ প্রয়োজনীয়তার কারণে ডিজাইনে করা হয়েছিল। তখন এই আরপানেট নেটওয়ার্কিং সিস্টেমটি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগকে বিশ্বের সবথেকে সামরিক শক্তিশালি দেশে রূপান্তর করতে সাহায্য করেছিল।  যদি নেটওয়ার্কের কোনও একটি অংশ বৃহত্তর সামরিক সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্থ হতো , তবে নেটওয়ার্কের বাকি কম্পিউটারগুলি একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েযেতো ।

তৎক্ষণাৎ সামরিক বিভাগ সামরিক সংগাতের বিশ্লেষণ করে নিয়ে এর উপযুক্ত ব্যবস্থা করে নিতো। সামরিক কম্পিউটার বিভাগ কম্পিউটারের সম্ভাব্যতাগুলি বুঝতে পেরেছিল এবং তারা আরও বুঝতে পেরেছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা যুদ্দের ফলাফলকে পরিবর্তন করেদিতে পারে। যুদ্দক্ষেত্রের বিশেষ প্রয়োজনে মার্কিন সামরিক বাহিনী কম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিলো।  ১৯৮০ এর দশকে জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গবেষণার কারণে এনএসএফএনইটি তৈরি করা হয়।

তখন পর্যন্ত আর্পানেট প্রযুক্তি ব্যবহার চলছিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষকদের একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য যা মূলত তৈরী করা হয়েছিল মূলত সামরিক প্রয়োগের জন্। কিন্তু ১৯৮৭ সাল পৌঁছতে পৌঁছতে ডাটা ট্রান্সফার বা তথ্য স্থানান্তরিত করার পরিমান এতো বেড়ে গিয়েছিলো যে আর্পানেট প্রযুক্তি এই কাজ করতে সক্ষম ছিল না সুতরাং জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন তথ্য স্থানান্তরের গতি বাড়ানোর জন্য উন্নত নেটওয়ার্কিং পদ্দতি নিয়ে আসে। এটাই ছিল দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির প্রথম ধাপ, এরফলে ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের বাস্তবিক ব্যবহারে দিক খুলে যায়। এরপর উন্নত উচ্চ-গতির নেটওয়ার্কটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোর উপর গবেষনা আরম্ভ হয়। ১৯৮০ এর দশকের বিজ্ঞান ও গবেষণার বিষয়ে ব্যবহারের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি আজকের ইন্টারনেট প্রযুক্তির সঙ্গে রাত দিন এর পার্থক্য।

সাধারণ মানুষের জন্য ১৯৯০ সালে অনেকগুলি সংস্থা ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী (আইএসপি) হিসেবে বাজারে চলে আসে, এই সংস্থা গুলো সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য মডেম এর মাধ্যমে কম্পউটারে কন্ফিগার করে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার সুযোগ করে দেয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) 1990 এর দশকের গোড়ার দিকে একটি ইউরোপীয় পরীক্ষাগার দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।

তাদের লক্ষ্য ছিল গবেষকদের আরও একনিষ্ঠ কাজ করার একটি উপায় তৈরি করা যাতে উনারা গবেষণার কারণে অন্য গবেষকদের মধ্যে সহজেই সংযোগ ও ব্যবহারিক আদানপ্রদান করতে পারেন ।  ফলস্বরূপ, প্রথম সর্বজনীনভাবে ন্যঅ্যাক্সেসযোগ্য ওয়েবসাইটটি ১৯৯৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ৩০ মিলিয়নেরও বেশি লোক ইন্টারনেট অ্যাক্সেস অর্জন করেছিল।

অনলাইন বিজনেস, এডুকেশন, ব্লগিং, ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ইমেইল, চ্যাট এরকম সুফলগুলোর সাথে সাথে কিছু অসামাজিক তত্ত্ব যেমন কম্পিউটার হেকার (যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটার এ প্রবেশ করে ব্যক্তিগত ইনফরমেশন, অফিসিয়াল সিক্রেটস এমনকি আপনার অক্কোউন্টের টাকা ট্রান্সফার করে দিতে সক্ষম), কিছু ক্রিমিনাল যারা অন্যের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও অসৎ উপায় জোগাড় করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দে। আজকের এই বিপুল সংখক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্যই অনেক অনলাইন কোম্পানি যেমন এমাজন, ফ্লিপ-কার্ট  আরও অনেক অনলাইন এর মাধ্যমে আমার আপনার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। শুধুই তাই নয় প্রায় সকল কোম্পানি একটি স্ট্যান্ডার্ড ওয়েবসাইট থাকা ওদের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।  এই ওয়েবসাইট মডেল বানানোর জন্য অনেক বড় বড় কোম্পানি তাদের বিশাল ব্যবসা সাজিয়ে রেখেছে।


এখন আমরা বলতেই পারি ইন্টারনেট পরিষেবা আজকের পৃথিবীর মানুষের জীবনধারাকে পাল্টে দিয়েছে, পৃথিবীর সবথেকে পিছিয়েপড়া জায়গার মানুষ তার প্রতিভাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে, অসংখ অজানা গাছপালা, প্রাণী, কীট-প্রতঙ্গ, খাদ্যভ্যাস, পোশাক, অলংকার, বাসস্থান এমনকি জলের নিচের অজানা পৃথিবির রহস্য একটি মাউস বাটন টিপে দিয়েই জেনে নিতে পারছি, তাৎক্ষণিক সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে আমাদের মোবাইল স্ক্রিনে চলে আসে।  একইসঙ্গে আমরা হারিয়ে ফেলেছি কাগজে চিঠি লেখার ইচ্ছে, হারিয়ে ফেলেছি সকলে বসে একসঙ্গে টিভিতে খবর, সিনেমা, কিংবা অন্য প্রোগ্রাম দেখা, হারিয়ে ফেলেছি হাতঘড়ি পরিধান করা আরও অনেক কিছু। পৃথিবির অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকের হাইস্পীড ইন্টারনেট এক্সসেস যার উপর আমাদের জীবনের বেশিরভাগটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, আজকে আমরা অনেকেই কল্পনা করতে পারিনা আমাদের হাতে মোবাইল নেই আর মোবাইল ডাটা সার্ভিস নেই ! কারণ আমরা ভালোকরেই জানি
ইন্টারনেট সার্ভিস থাকলে যেকোনো অজানা স্থানে আমাদেরকে আমাদের প্রয়োজনীয় সার্ভিস ও পণ্যটি খুঁজে পেতে সহায়তা করে । একটু ভালোকরে লক্ষ করলে দেখতে পারবেন অনেক লোক ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেংকিং, ইনভেস্টমেন্ট, ড্রাইভিং ট্রেনিং, অনলাইন এডুকেশন, বিনোদন, ইভেন্ট টিকেট বুকিং, ফুড সার্ভিস, হেলথ ট্রেনিং, গেমিং, শপিং, মিউজিক ট্রেইনিং, ডেটিং, গবেষণার মতো অনেক প্রয়োজনীয় কাজ প্রতিদিন করে থাকেন।
  ইন্টারনেট ব্যবহার আজকে আমাদের জীবনে একটি সাধারণ প্রয়োজনীতা হয়ে পড়েছে। 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সেল ফোন ট্র্যাকার :: Cell Phone Tracker

AD-SENSE !! কত টুকু সত্য

I B P বা ইন্টারনেট বিজনেস প্রমোশন